ঢাকা , সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫ , ১৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাইলাতুলকদরের নামাজ পড়তে গিয়ে মসজিদে মুসুল্লির মৃত্যু


আপডেট সময় : ২০২৫-০৩-২৮ ১৬:৩৭:২৮
লাইলাতুলকদরের নামাজ পড়তে গিয়ে মসজিদে মুসুল্লির মৃত্যু লাইলাতুলকদরের নামাজ পড়তে গিয়ে মসজিদে মুসুল্লির মৃত্যু


 
 
মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠির রাজাপুরে মাহে মরজানে পবিত্র লাইলাতুলকদরের নামাজ পড়তে গিয়ে নব্বই বছর বয়সী সাহেব আলী নামে এক বৃদ্ধ মুসুল্লির মসজিদে মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) রাতে এশার নামাজের সময় উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের পুটিয়াখালি এলাকায় মোল্লা ফাউন্ডেশন ওয়াকফ এটেস্ট জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরে তার জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়। 
 
প্রত্যক্ষদর্শী ও মুসল্লিদের বরাতে জানা যায়, সাহেব আলী ওযু শেষ করে দ্রুত মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করছিলেন। ঠিক তখনই হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান তিনি। উপস্থিত মুসল্লিরা তাকে দ্রুত ধরে ফেলেন। এরপর মসজিদেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন নব্বই বছরের এই প্রবীণ মুসল্লি। তিনি নিয়মিত মসজিদে পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করতেন। সাহেব আলীর কোনো ছেলে সন্তান নেই, চার কন্যা সন্তানের মধ্যে তাঁর বড় মেয়াই দেখাশোনা করতেন। দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকার পর, চার বছর আগে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন এবং বড় মেয়ের সাথেই বসবাস করছিলেন। পরিবারে তিনি ছিলেন সকলের শ্রদ্ধার পাত্র।
 
স্থানীয় হোমিও চিকিৎসক মো. নিপু সিকদার বলেন, 
মসজিদে প্রবেশ করে সাহেব আলী নিচে পড়ে যায় এরপর পাশ থেকে তাকে একজন লোকে ধরে। আমরা সবাই নামাজরত অবস্থায় ছিলাম। নামাজ শেষ করে এসে তার পালস চেক করে নিশ্চিত হয়ে বোঝা যায় তিনি আর জীবিত নেই।
 
নামাজরত মুসল্লি মো. ইলিয়াস মোল্লা জানান, মসজিদে ফরজ নামাজ আদায় করি। ইমাম সালাম ফেরানোর ঠিক আগমুহূর্তে সাহেব আলী মসজিদে প্রবেশ করেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাটি দেখেই  দ্রুত নামাজ শেষ করে আমরা তার কাছে ছুটে যাই।
 
মোল্লা ফাউন্ডেশন ওয়াকফ এটেস্ট জামে মসজিদের ইমাম মো. ইব্রাহিম খান বলেন, "সাহেব আলী ছিলেন আমাদের মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তিনি জামাতে সবসময় এখানেই আদায় করতেন। গতকাল একটু দেরি করে আসলেও, দুর্ভাগ্যবশত নামাজ শুরু করতে পারলেন না। তবে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন এক পবিত্র রাতে।" 
 
তিনি আরও বলেন, "গতকাল ছিলো ২৭শে রমজান লাইলাতুল কদর ও জুমাতুল বিদার রাত— এমন এক বরকতময় রাতে মসজিদে এসে মৃত্যুবরণ করা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের বিষয়। আশা করি, আল্লাহ তাকে জান্নাতের প্রথম সারির মুসল্লিদের কাতারে স্থান দেবেন।"
 
মৃত্যু সাহেব আলীর নাতি, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জলিল আদিক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "আমি ঢাকায় পড়াশোনা করি। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে ফিরে নানাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, বুঝিনি সেটাই হবে শেষবারের মতো। আমরা প্রায়ই একসাথে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতাম। কিন্তু গতকাল আমি একটু দেরি করেছিলাম, আর নানা আগে চলে গিয়েছিলেন। ভাবিনি, তিনি আর আমাদের মাঝে ফিরবেন না।"
 
মোল্লা ফাউন্ডেশন ওয়াকফ এটেস্ট জামে মসজিদের সভাপতি মো. হুমায়ূন কবির মোল্লা বলেন, "আমরা সবাই মসজিদে এশার নামাজরত অবস্থায় ছিলাম। সাহেব আলী নামাজ আদায় করতে এসে মসজিদে মৃত্যুবরণ করেছেন। এমন মৃত্যু সবার কপালে হয় না, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন, আমরা সবাই তার জন্য দোয়া করি।"
 
একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসেবে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাহেব আলী নামাজের প্রতি অনুগত ছিলেন। পবিত্র রজনীতে মসজিদেই তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা গ্রামবাসীর মনে এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করেছে।

তবে স্থানীয়রা মনে করেন, এমন এক রাতে, এমন এক পুণ্যময় স্থানে মৃত্যুবরণ করাকে সৌভাগ্য বলেই মনে করা উচিত। সাহেব আলীর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে, তবে সবাই তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছেন।





 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ